রবিবার, মে ২৯, ২০১১

Child Golpo




খেলান-দোলানের গল্প


চিরায়তা পূর্ণা চক্রবর্তী (বয়স-১০)
অনেক দিন আগেকার কথা। এক দেশে এক রাজা তার এক রানি কে নিয়ে থাকতেন। সেই রাজার ভারী দুঃখ। একে তো দেশে কোন সুখ-শান্তি নেই, তার ওপরে রাজার কোন ছেলেমেয়ে নেই। একদিন রাজার দরবারে এক সন্ন্যাসী এলেন। তিনি বললেন, "মহারাজ,আমি আপনার দুঃখ জানি”। বলে তিনি একটি গোলাপ ফুল দিলেন, তারপর আবার বললেন, "এই ফুল যদি আপনি পাঁচদিন জলে রেখে, পিষে আপনার রানিকে মধু দিয়ে খাওয়ান তাহলে আপনার সব দুঃখ ঘুচে যাবে”। এই বলে তিনি সেই ফুল রাজার হাতে দিয়ে দরবার থেকে চলে গেলেন। রাজা ঠিক সন্ন্যাসীর কথা মত ফুলটাকে পাঁচদিন জলে রেখে পিষে মধু দিয়ে রানিকে খাওয়ালেন। তারপরে রানির দুই জমজ ছেলে হল। তাদের নাম দেওয়া হল খেলান আর দোলান। তাদের এইরকম নামের কারন আছে। খেলান সবসময় খেলতে থাকে আর দোলান সবসময় দুলে দুলে ঘুমোয়। তাদের কাজকম্মো ছাড়া আর সব এক। তাদের চোখদুটো এক-ই রকম, গায়ের রঙ এক, মাথায় এক-ই রকম লম্বা।এদিকে হয়েছে কি, সেই রাজ্যের দিকে এক রাক্ষসের নজর ছিল। রাজ্যের সব ঘোড়া আর হাতিকে রাক্ষস খেয়ে ফেলল, তারপর যত সেপাই সান্ত্রীকে। তারপর রাজা আর রানিকেও গপ্‌ করে গিলে ফেলল। তখন খেলান আর দোলান বেশ বড় ছেলে। ওরা সেদিন খাটের নিচে ঢুকে লুকোচুরি খেলছিল তাই রাক্ষস ওদের খুঁজে পায়নি। খাটের তলা থেকে বেরিয়ে ওরা বলল “একি! আমাদের রাজ্যের সবাই রাক্ষসের পেটে চলে গেছে! ওকে শায়েস্তা করতে হবে”।
তখন খেলান আর দোলান ইচ্ছে করে হাতে দড়ি পাকিয়ে নিয়ে রাক্ষসের অপেক্ষায় খাটে উঠে শুয়ে রইল। রাক্ষস এল হাঁউ-মাঁউ-কাঁউ বলে মানুষের গন্ধ পেয়ে। এক গরাসে গপ্‌ করে যেই খেলান কে খেতে গেছে অমনি দোলান ওর হাতের দড়ি দুলিয়ে দিল, আর সেই দড়ি রাক্ষসের চারিদিকে পাক খেয়ে জড়িয়ে গেল। রাক্ষস বন্দী হয়ে গেল। খেলান তো খুব ভাল খেলতে পারে, সে তখন রাক্ষস কে লাট্টুর মতন ঘোরাতে লাগল, দড়িটাকে লেত্তি করে। রাক্ষস বাঁই বাঁই ঘুরতে লাগল সেই সঙ্গে ওর মাথা ঘুরতে লাগল। তখন দোলান তাকে তুলে নিয়ে দোলাতে শুরু করল। অমনি হড়হড় করে রাক্ষস বমি করে ফেলল,আর ওর পেট থেকে রাজা, রানি, মন্ত্রী, সেপাই, সান্ত্রী, হাতি, ঘোড়া সব বেরিয়ে এসে আবার দিব্যি আগের মতন হাঁটা চলা করতে লাগল।


পাখির কাছে শেখা


সৌরজ্যোতি বক্সী (বয়স-৮)

প্রতিদিন সকালে আমি যখন ঘুম থেকে উঠি দেখি একটা ছোট্ট সুন্দর নীল-হলুদ রঙের নাম না জানা পাখি আমাদের কাঁচের জানলার বাইরে এসে বসে। পাখিটা কাছেরই কোনো গাছে থাকে বোধহয়। ছোট্ট সরু ঠোঁটটা দিয়ে জানলার কাঁচের ওপর নিজের ছায়াটাকে রোজ কিছুক্ষণ ঠোকরাতে থাকে সে। ও আমাকে রোজ স্কুলের জন্যে তৈরী হতে দেখে। আমি ওকে আসতে দেখলে ভীষণ খুশী হই আর মাঝে মাঝে ভাবি ইস ওর কি মজা !! ওকে স্কুলে যেতে হয়না,রোজ পড়তে বসতে হয়না,হোমওয়ার্ক ক্লাসটেষ্ট কিচ্ছু নেই । আবার কখনো বা আমার মনে হয় শুধু উড়ে উড়েই ও নিজের কত সময় নষ্ট করে !! কিন্তু ওর মতন উড়তে পারিনা বলেও আবার আমার খুব দুঃখ হয় জানো !

আমার বাবা-মা বলে যে ওরা পাখি তাই ওরা গাছে থাকে,খড়কুটো বা শুকনো কাঠি খুঁজে এনে বাসা বানায়,ডিম পাড়ে,ডিমে তা দেয়,খাবার সংগ্রহ করে এনে বাচ্চাদের খাওয়ায় । ওটাই ওদের কাজ।

যেমন আমার কাজ পড়াশোনা করা,বাবা মা আর গুরুজনদের কথা শোনা আর সময়ের কাজ সময়ে করা ।

পাখি যেমন নিজের কাজ নিজেই করছে আমাকেও তেমনি আমার কাজগুলো সুন্দরভাবে নিজের মতন করে করতে হবে।তবেই তো আমি বড় হব,প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠব। 
অভাবপূরণ
শ্রেয়া বিশ্বাস (বয়স ৯)

এক গ্রামে এক ধনী শেঠজি ছিল।শেঠজির মনটা ছিল বড্ড ভাল।প্রতিদিন ভোরে মন্দিরে গিয়ে শেঠজি গরীব বাচ্চাদের খাবার-দাবার,জামাকাপড় বা কিছু না কিছু দান করে আসত।তাই শেঠজি মন্দিরে এলেই গরীব অনাথ বাচ্চারা ছুটে এসে তাকে ঘিরে ধরত কিছু পাবার আশায়।শেঠজি রোজই মন্দিরে আসেন, দানধ্যান করেন কিন্তু রোজই লক্ষ করেন যে একটা ছোট্ট মেয়ে কোনদিন তাঁর কাছে ছুটে আসেনা ,দূরে দাঁড়িয়ে কেবল তাকিয়ে থাকে। একদিন শেঠজি নিজেই তার কাছে যান,জানতে চান “কি ব্যাপার মা,সব্বাই আসে তুই তো কোনদিন আমার কাছে কিছু চাসনা,তোর খিদে পায়না ?”

“আমার চাইতে ভাল লাগেনা বাবা,আমি চাইনি বলেইতো তোমার মতন একজন বড় মানুষ আজ নিজে আমার কাছে এল।ঈশ্বর যার জন্যে যেদিন যেটুকূ খাবার মেপে রেখেছেন সে সেদিন সেটুকুই খেতে পায়”। মেয়েটির কথা শুনে শেঠজি মুগ্ধ হয়ে গেলেন এবং তাকে নিজের মেয়ের মতন করে মানুষ করার জন্যে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন ।এরপর ঐ অনাথ মেয়েটিকে তিনি অনেক লেখাপড়া শেখালেন এবং নিজের মনের মতন করে তাকে মানুষ করলেন।মেয়েটির কোনদিন আর কোনকিছুর অভাব রইলনা ।

রাজা আর সেই দুখীনি বৃদ্ধা
আবীরা মুখার্জী (বয়স-৮)

একদিন রাজা আর সুনীল বিকেলে খেলতে বেরিয়েছে।রাস্তায় তারা দেখল একজন গরীব বৃদ্ধা পথের ধারে শুয়ে রয়েছে।রাজা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল “তুমি এখানে শুয়ে আছো কেন?কত গাড়ী চলছে,সরে যাও ,ওঠ এভাবে রাস্তায় শুয়ে থেকনা,দুর্ঘটনা ঘটতে পারে”।

-“আমার নড়াচড়া করার শক্তি নেই বাবা,তিনদিন হল আমি কিছু খাইনি”...বৃদ্ধার কথায় খুব দুঃখ হল রাজার।সে এক দৌড়ে বাড়ি গেল,মাকে গিয়ে বল্ল,”আমায় কিছু খেতে দেবে মা?”রাজার মা রাজাকে খাবার জন্যে কয়েকটা কেক,বিস্কুট আর মিষ্টি দিলেন।রাজা সেগুল নিয়ে দে ছুট। বৃদ্ধার কাছে এসে বলল “এই নাও ওঠ ,খেয়ে নাও এগুলো”।বৃদ্ধা পরম তৃপ্তি দিয়ে খাবারগুলো খেয়ে রাজাকে অনেক আশীর্বাদ করলেন “তুমি বড় ভাল ছেলে বাবা,ভগবান তোমার মঙ্গল করুন”। বাড়ি ফিরে রাজা তার মাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে মা বললেন, “আমি খুব গর্ববোধ করছি রাজা,এমনিভাবেই সবসময় তুমি গরীবদের সাহায্য করবে”। রাজা বলল “আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব মা”

। 


উফফ্‌, নাকটা গেল রে !!
রৌনক রায় (বয়স ৯) 

ছোট্ট বালু বাঁদর দিনরাত গাছে ঝোলে আর বদমায়েশি করে ।এটা ছুঁড়ছে,ওটা ফেলছে,পাখিদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে এই ওর কাজ,জিনিস ছোঁড়া আর নষ্ট করা ওর যেন একটা স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে ।ভাল ভাল পাকা পাকা ফল নিজেও খাবেনা কাউকে খেতেও দেবেনা,সব কেবল ছুঁড়ে ছুঁড়ে নষ্ট করবে।একদিন টুইটু নামের একটা ছোট্ট মিষ্টি পাখি একটা পাকা পেঁপে দেখে খেতে নেমেছে ঠিক সেই সময় বালু সেটাকে ছিঁড়ে নিয়ে থপ্‌ করে ছুঁড়ে মারল জঙ্গলের ভেতর।“যদি খাবেইনা তাহলে ফলটাকে অমনি নষ্ট করলে কেন?”-জিজ্ঞাসা করল টুইটূ। “যাও যাও,নিজের কাজ কর গিয়ে বেশি পাকামি করতে হবেনা তোমায়,বেশ করেছি ছুঁড়েছি,আমার যা খুশী করব,তোমার তাতে কি?”-জবাব দিল বালু।বলতে বলতেই বালুর চোখে পড়ল একটা রবারের লাল রঙের বল,যথারীতি সেটা তুলে ছুঁড়ে মারল বালু।বলটা লাগল গিয়ে সামনের গাছে,আর সঙ্গে সঙ্গে সটান ফেরত এসে সোজা বালুর নাকে। “উউউউউউহ্‌,আহহ্‌,মাগো,গেলাম...নাকটা গেল রে !!!” চিতকার করে উঠল বালু।টুইটূ পিছন ফিরে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল”আর কোনদিন ছুঁড়বে জিনিস অমনি করে?” “না ,আর কখখনো নয়,খুব শিক্ষা হল যা হোক”-জবাব দিল বালু ।

আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু 
সঙ্কর্ষণ সেনগুপ্ত (বয়স-১০)

প্রত্যেক দিনের মতন সেদিন বিকেলেও আমি পার্কে গেছিলাম খেলা করতে।বন্ধুদের সাথে খেলায় মত্ত এমন সময় হঠাত কুঁই কুঁই করে করুণ সুরে একটা কান্নার মতন আওয়াজ।দেখলাম কিছু দুষ্টু ছেলে একটা বাচ্ছা কুকুরকে তাক্‌ করে ঢিল ছুঁড়ছে। আমার খুব রাগ হল।আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে ছেলেগুলোকে বকা-ঝকা করে তাড়িয়ে দিলাম।দেখলাম কুকুরছানাটা বেশ আহত,ঠিকমত হাঁটতে পারছেনা।আমি কোলে করে তাকে বাড়িতে নিয়ে এলাম।মা তাকে একবাটি গরম দুধ দিল।সে চুক্‌চুক্‌ করে দুধটুকু খেয়ে নিল।কালোসাদা রঙের কুকুরছানাটির নাম দিলাম শ্যাডো-ইংরেজীতে যার মানে ছায়া।রাতে বাবা অফিস থেকে ফেরার পর আমরা শ্যাডোকে পশুদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম।ডাক্তারবাবু তার পায়ে একটা ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিলেন।বাড়ি ফিরে শ্যাডোর কি আনন্দ ! টুক্‌টুক্‌ করে লেজ নাড়াচ্ছে আর আমার পেছন পেছন ছুটে বেড়াচ্ছে।বাবা আর মা শ্যাডোকে বাড়িতে রাখতে রাজী হল।সেই থেকে শ্যাডো আমার সবসময়ের সঙ্গী।আমার তো ভাই-বোন নেই তাই শ্যাডোকে আমি আমার নিজের ভাইয়ের মতন ই ভালোবাসি।এখন শ্যাডোর বয়স এক বছর।রোজ যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরি শ্যাডো লাফিয়ে উঠে আমাকে আদর করে।বিকেলে আমার সাথে খেলা করে।সন্ধ্যেবেলা যখন পড়াশোনা করতে বসি আমার পায়ের কাছে চুপটি করে শুয়ে থাকে শ্যাডো।রাত্তিরে আবার আমার সাথে ছাড়া ঘুমায়না।মা বলে শ্যাডোর নামকরণ সার্থক,ও সত্ত্যি ই আমার ছায়াসঙ্গী।



বিশ্বকাপ নিয়ে
রৌণক বন্দ্যোপাধ্যায় (বয়স-১২ বছর) 

২০১০ সালের ১১ই জুন দক্ষিন আফ্রিকায় শুরু হল ১৯ তম বিশ্বকাপ।প্রথম ম্যাচ হল আয়োজক দক্ষিন আফ্রিকার সাথে মেক্সিকোর।দুটো দলই যদিও মাঝারি মানের তবুও বিশ্বকাপের ম্যাচ বলে কথা। কত কষ্টে সারা বিশ্ব থেকে মাত্র ৩২ টা দল উঠে এসেছে।এবার প্রথম আফ্রিকায় বিশ্বকাপের আসর বসেছে।রঙ্গের ছটা,নাচ-গানের ফোয়ারায় দারুণ ছিল সেই শুরুটা।ভারত কিন্তু বিশ্বকাপে নেই।শুধু এবারেই নয়,কোনবারেই থাকেনা।সেই একবার ১৯৫০ সালে খেলার সুযোগ পেয়েছিল ভারত কিন্তু তখন খালি পায়ে খেলত বলে’ফিফা’ খেলতে দেয়নি।তবুও বাঙ্গালী তথা ভারতবাসীর বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনার আর শেষ নেই। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে তারা এখন দুই দলে ভাগ।এবারে তো আবার আর্জেন্টিনাকে নিয়ে মাতামাতি আরো বেশী১৯৮৬ র নায়ক দিয়েগো মারাদোনা যে এবারের আর্জেন্টিনার কোচ।আবার তাঁর সঙ্গে আছেন তাঁর শিষ্য,বাঁ পায়ে খেলা আরেক নক্ষত্র বার্সেলোনার সেরা স্ট্রাইকার লাওনেল মেসি।ওদিকে ৯৪ এর বিশ্বকাপ জয়ী দলের ক্যাপ্টেন এবার স্বয়ং কোচ ব্রাজিল দলের।স্পেনের এবার বিশ্বকাপ পাবার দারুণ একটা সুযোগ রয়েছে।টিমটাও অসাধারন সাজিয়েছেন ভিনসেন্ট।স্পেনের জাদু দেখার ইচ্ছে রইল।এছারা রয়েছে ইল্যান্ড।ফাবিও কাপেলোর হাতে পরে দলটা বেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।জোহান ক্রুয়েফের হল্যান্ডও এবার বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া।দেখা যাক শেশ পর্যন্ত কি হয়। ওয়াকা-ওয়াকা !!!
সংগ্রহে- আবু রায়হান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন