রবিবার, মে ২৯, ২০১১


এক ব্যাগ ছন্দ
সংগ্রহে- আবু রায়হান

পাগলা দাদু

“ইরিব্বাবা, ইরিব্বাবা,” বলেই দাদু লাফ মারেন;
তারপরেতেই চুলকে কনুই ফোঁশফোঁশিয়ে হাঁফ ছাড়েন!
ওমনি আবার ডাইনে ঘুরে চমকে ওঠেন কাক দেখে,
তাইতে কেমন তৃপ্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন নাক ডেকে!
ঘন্টা পাঁচেক ঘুমিয়ে নিয়ে ওঠেন হঠাৎ খাট ছেড়ে,
আনিয়ে খাবার গিলতে থাকেন গপ-গপিয়ে, পাত পেড়ে;
খাবার খেয়েই ঢেঁকুড় তুলে, বাহান্ন বার কান মলে
ধর্মতলার রাস্তা ধরে হন-হনিয়ে যান চলে।
ওই যেখানে সবাই বসে ধর্ণা দিয়ে গান শোনে,
সেই সেখানে গিয়েই দাদু নাক খুঁটে যান আনমনে;
ওমনি হঠাৎ সামনে ঝুঁকে উলটো হাতে কান ঘষে
এদিক সেদিক তাকিয়ে নিয়ে দিদির পাশে যান বসে।
এ সব দেখে ভাইরা শুধোয়, “কি দাদু, কি ধান্দাটা?”
ক্লান্ত হেসে বলেন দাদু, “জানিস, আমি মান্ধাতা?
হাজার হাজার বছর ধরে শুনছি তোদের গুলতানি,
সবাই তোরা রুগ্ন গোরু, সাজিস যতই মুলতানী!
দাদার কথায়, দিদির কথায়, লাফিয়ে বেড়াস দিগ্‌বিদিক,
মারবে তোদের ভোজপুরী ল্যাং, ঠেকেই তোরা শিখবি ঠিক!
ক্যান্‌ রে তোরা দুচোখ বুজে ওদের কথায় চলতে চাস?
ভাবনা নিজের চুলোয় দিয়ে ওদের কথাই বলতে যাস?
এই দুনিয়ায় প্রশ্ন কত, আর কবে ভাই খুঁজবি রে?
কিছুই তোরা জানিস নে ভাই, আর কবে ফের বুঝবি রে?
জানিস কেন সর্ষে ইলিশ ভাপিয়ে খেলে ভাল্লাগে?
জানিস তোরা টক কেন কুল? লঙ্কা কেন ঝাল লাগে?
কক্ষণও কি দেখিস ভেবে, পায়রা কেন উড়তে চায়?
পতঙ্গরা আগুন দেখে বৃথাই কেন পুড়তে যায়?
হঠাৎ কেন ব্যর্থ প্রেমিক পদ্য লেখে শ্বাস ফেলে?
মুখটা কেন পেঁচিয়ে ওঠে চুন মাখিয়ে ঘাস খেলে?”
এই না বলে হঠাৎ দাদু থমকে গিয়ে, নোখ খুঁটে,
ফ্যাল-ফ্যালিয়ে তাকিয়ে দেখেন চতুর্দিকে, চোখ ফুটে;
ওমনি আবার ‘ডুম-ডুমা-ডুম’ বাজিয়ে নিয়ে ড্রামখানা
মালকোঁচাটা বাগিয়ে ধরে যান পালিয়ে নামখানা!


আকাশের ফুল

নীল আকাশে সদাই দেখি
অপূর্ব সব ফুল ভাসে,
নানান রকম ফুলের মালা
ছড়িয়ে থাকে নীল ঘাসে।
ওই যে গোলাপ, জুঁই, চামেলী,
ওই যে টগর, খায় দোলা,
ওই যে চাঁপা, বকুল, জবা,
সূর্যমুখী, মুখ তোলা।
যে ফুল তুমি চাইবে সে ফুল
দেখবে কেমন উড়ছে তায়,
মনমাতানো ফুলের সারি
মাথার ওপর ঘুরছে, ভাই!
ফুরফুরিয়ে উড়ছে তারা
হালকা হাওয়ার পাল ধরে,
বর্ষাকালে উড়ছে আবার
ছাই মাখা কোন শাল পরে।
তোমরা এসব ফুলকে দেখে
“মেঘ” বল ভাই, ভুল করে,
একনাগাড়ে তাখিয়ে দেখো –
দেখবে কেবল ফুল ওড়ে!
ভাবছো বুঝি গল্প এ সব?
মোটেও এ সব গল্প না!
এই তো হল সত্যিকারের
আকাশ-কুসুম কল্পনা!!

শেয়াল কথা

চিল্‌কা লেকের পূর্ব পারের গভীরতম জঙ্গলে
মনের সুখে করছিল বাস জন্তুরা এক দঙ্গলে।
হঠাৎ সেদিন ভেলোর থেকে জুটলো সে এক খ্যাঁক্‌শেয়াল,
এসেই ব্যাটা মাদ্রাজীতে জুড়ল বিকট এক খেয়াল।
ল্যাজ নাড়িয়ে আলাপ সেরেই ধরল সিধে অন্তরা, 
শুনেই কেমন ভির্মি খেল বাদবাকি সব জন্তুরা!
শেয়াল তখন খেয়াল ছেড়ে করল শুরু ডিস্‌কো নাচ,
একান্নটা স্টেপ্‌ লাগিয়ে মারল তুড়ি তিনশো পাঁচ!
তারপরেতেই ডাইনে বেঁকে কাশল ঝেড়ে আধ ডজন,
ওমনি আবার গুন্‌গুনিয়ে লাগিয়ে দিল সাঁই ভজন!
এ সব দেখে জন্তুরা সব করল শুরু ডিস্‌কাশন,
“বেশ তো ছিলাম আমরা ক’জন, এ আবার কি নির্যাতন?”
“নাচ দেখে ভাই ঘুরছে মাথা, হচ্ছে বোধহয় চোখ ট্যারা,”
“খেয়াল তো নয়, বাজছে যেন বিচ্ছিরি এক রাম-ঢ্যাঁড়া!”
“বুকটা কেমন কাঁপছে দেখো, ঝটর পটর, থর্‌ থরো,
জলদি ভায়া, সবাই মিলে উপায় একটা বার করো!”
এ সব শুনে বলল সে এক নাদুসনুদুস চামচিকে,
“উপায় আমি বলতে পারি, দাও যদি ভাই পাঁচ সিকে!”
জন্তুরা তো গরীব বেজায়, তাদের কাছে পয়সা কই?
তাই তো আজও গাইছে শেয়াল, “হুক্কা হুয়া, তা থৈ থৈ!”


পাখিরা

ওই দেখা যায় 
দূর গগনে
উড়ছে কত পাখি, 
স্কুল কলেজের বালাই যে নেই,
সমস্ত দিন ফাঁকি!
মনের সুখে ভাসছে কেমন 
হাওয়ার আঁচল ধরে,
খেয়াল হলেই ডাকছে আবার 
কিচির মিচির বলে।
টুপ টুপা টুপ খাচ্ছে দানা,
মকাই, মটর, ছোলা, 
তার পরেতেই বসছে গাছে,
খাচ্ছে হাওয়ায় দোলা।
খাবার দাবার হজম হলেই
দিচ্ছে করে ইয়ে,
তাই তো বোধহয় যাচ্ছে না কেউ
গাছের তলা দিয়ে!
ওদের তো কেউ মারছে না ভাই,
বকছে না কেউ মোটে,
তাই তো কেমন উড়ছে ওরা
হাল্কা হাসি ঠোঁটে।
আনন্দেতেই উড়ছে তারা
বিচিত্র সব পাখি
– দেখেই আমার ইচ্ছে করে,
কুহুক্‌ কুহু ডাকি!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন